Skip to main content

ভয়াবহ সংকটে আই সি বি ইসলামী ব্যাংক।

 


ব্যাংকিং খাতে শৃঙ্খলা ও সুশাসন ফিরিয়ে আনতে দুর্বল ব্যাংকগুলোকে ভালো ব্যাংকের সঙ্গে একীভূত করার উদ্যোগ নিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। ইতোমধ্যে এক্সিম ব্যাংকের সঙ্গে একীভূত হওয়ার চুক্তি করেছে পদ্মা ব্যাংক। সম্ভবত পদ্মা ব্যাংকের পর কেন্দ্রীয় ব্যাংকের একীভূতকরণের তালিকায় রয়েছে আইসিবি ইসলামিক ব্যাংক, কারণ তারল্য সংকটে ধুঁকছে শরিয়াহভিত্তিক ব্যাংকটি।


২০০৮ সালে ওরিয়েন্টাল ব্যাংকের ধ্বংসস্তূপ থেকে গড়ে ওঠা শরিয়াহভিত্তিক ব্যাংকটি বছরের শুরু থেকে তীব্র তারল্য সংকটে পড়েছে। তাই পুরোদমে কার্যক্রম চালিয়ে যেতে হিমশিম খাচ্ছে বলে জানা গেছে।

 

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩ সাল শেষে ব্যাংকটির ১ হাজার ৮২৩ কোটি টাকার মূলধন ঘাটতি দেখা দিয়েছে। একইসঙ্গে ৭৯০ কোটি ৪ লাখ টাকা বিতরণ করা ঋণের (বিনিয়োগ) ৮৭ শতাংশই খেলাপিতে পরিণত হয়েছে।


বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তাদের কাছ থেকে দ্য ডেইলি স্টার জানতে পেরেছে, ব্যাংকটির পরিস্থিতি এতটাই ভয়ানক যে, তাদের এমন কোনো সিকিউরিটিজ নেই, যার বিপরীতে অন্য ইসলামী ব্যাংক ও কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে অর্থ ধার করতে পারবে। আরও জানা গেছে, ব্যাংকটি ধাপে ধাপে কর্মচারীদের বেতন পরিশোধ করছে।


বাংলাদেশ ব্যাংকের অব-সাইট সুপারভিশন বিভাগ ব্যাংকিং প্রবিধি ও নীতি বিভাগকে আইসিবির বিরুদ্ধে সংশোধনমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার অনুরোধ জানিয়েছিল, কারণ তারল্য সংকটে ব্যাংকটি কার্যত বন্ধ আছে।


কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এক কর্মকর্তা ডেইলি স্টারকে বলেন, 'শিগগিরই কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রম্পট কারেকটিভ অ্যাকশন ফ্রেমওয়ার্কের আওতায় একটি শক্তিশালী ব্যাংকের সঙ্গে আইসিবি ইসলামিক ব্যাংকের একীভূত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। কারণ জমে থাকা আমানত, মূলধন ঘাটতি, উচ্চ খেলাপি ঋণ ও তারল্য সংকটে ব্যাংকটি এখন পদ্ধতিগত ঝুঁকিতে রয়েছে।


আর্থিক সংকট নিরসনে গত ৩১ জানুয়ারি বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে জামানতহীন ৫০ কোটি টাকা তারল্য সহায়তার আবেদন করেছিল আইসিবি ইসলামি ব্যাংক। তবে দুই সপ্তাহ পর সেই আবেদন খারিজ করে দেয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক। কারণ আগে থেকেই বাংলাদেশ ব্যাংকেরে কাছে আইসিবি ইসলামিক ব্যাংকের ৪২৫ কোটি টাকা দায় ছিল।


বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র মো. মেজবাউল হক বলেন, 'ব্যাংকটির কোনো গ্রহণযোগ্য সিকিউরিটিজ নেই, এ কারণেই কেন্দ্রীয় ব্যাংক তারল্য সহায়তার আবেদন প্রত্যাখ্যান করেছে।'


তিনি আরও বলেন, 'চাইলে আইসিবি ইসলামিক ব্যাংকের কার্যক্রম পরিচালনায় মালিকও অর্থ সরবরাহ করতে পারেন।'


এ বিষয়ে জানতে চাইলে আইসিবি ইসলামিক ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মুহাম্মদ শফিক বিন আবদুল্লাহ বলেন, 'আমরা কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আপিল করেছি। কিছু ব্যাংক কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তারল্য সহায়তা পেয়ে যাচ্ছে, কিন্তু আমাদের ফিরিয়ে দেওয়া হয়েছে।'


ধাপে ধাপে কর্মীদের বেতন-ভাতা পরিশোধের বিষয়টি অস্বীকার করে মুহাম্মদ শফিক বিন আবদুল্লাহ বলেন, 'শুধু আইসিবি ইসলামিক ব্যাংক নয়, অধিকাংশ ব্যাংকই তারল্য সংকটে ভুগছে।'


তিনি আরও বলেন, 'কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ৪২৫ কোটি টাকা দায়সহ অধিকাংশ ইস্যু লিগ্যাসি ইস্যু এবং ঋণ বিতরণসহ সব ধরনের ব্যাংকিং কার্যক্রম স্বাভাবিকভাবে চলছে।'


তবে আইসিবি ইসলামিক ব্যাংকের তিনজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'মাস শেষে ব্যাংকটি কর্মীদের পুরো বেতন দিতে হিমশিম খাচ্ছে।'


তারা জানেন, আইসিবি ইসলামিক ব্যাংকের ৩৩টি শাখায় ৩৫০ জন কর্মী আছেন।


শরিয়াহভিত্তিক ব্যাংকটিতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নিয়োজিত পর্যবেক্ষক থাকা সত্ত্বেও আর্থিক অবস্থার এই দশা হয়েছে।


বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিচালক মো. রজব আলীকে ২০২২ সালে পর্যবেক্ষক হিসেবে আইসিবি ইসলামিক ব্যাংকে পাঠানো হয়েছিল। কিন্তু, পূর্বসূরিদের মতো তিনিও কোনো ইতিবাচক পরিবর্তন আনতে ব্যর্থ হন।


মো. রজব আলী দ্য ডেইলি স্টারকে জানান, তিনি ব্যাংকটির ত্রৈমাসিক ভার্চুয়াল সভায় যোগ দেন, কিন্তু সেখানে ব্যাংকের সমস্যাগুলো বিস্তারিত আলোচনা করা হয় না।


তিনি স্বীকার করেন, তারল্য সংকটসহ ব্যাংকটি বিভিন্ন ধরনের চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হচ্ছে।


জানা গেছে, গত কয়েক বছর ধরে ব্যাংকটি লোকসানে আছে এবং ২০২৩ সালে লোকসান দাঁড়িয়েছে ৫৬ কোটি ৫০ লাখ টাকা। এমনকি লোকসানের কারণে দীর্ঘদিন ধরে লভ্যাংশ ঘোষণা করতে ব্যর্থ হয়েছে আইসিবি ইসলামিক ব্যাংক।


সর্বশেষ প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, ২০২২ সাল শেষে ব্যাংকটির আমানত ছিল ১ হাজার ২১২ কোটি টাকা, যার মধ্যে ফ্রোজেন ডিপোজিট ছিল ৪৪৪ কোটি টাকা।


ফ্রোজেন ডিপোজিট হলো ওরিয়েন্টাল ব্যাংকের আমানত, যা মূলত কেন্দ্রীয় ব্যাংক আটকে রেখেছিল। ব্যাংকটির ফ্রোজেন ডিপোজিট ছিল ২ হাজার কোটি টাকা এবং এ পর্যন্ত ওরিয়েন্টাল ব্যাংকের আমানতকারীদের প্রায় দেড় হাজার কোটি টাকা পরিশোধ করা হয়েছে।


ব্যাংকটির উৎপত্তি ১৯৮৭ সালে, তখন এটি আল-বারাকা ব্যাংক নামে পরিচালিত হতো। ১৯৯৪ সালে এটি 'সমস্যাযুক্ত ব্যাংকে' পরিণত হয়। তখন ব্যাংকিং খাতে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে ত্রুটিযুক্ত ব্যাংকগুলোতে পর্যবেক্ষক নিয়োগের প্রথা চালু করে বাংলাদেশ ব্যাংক।


এরপর ২০০৪ সালে এটি ওরিয়েন্টাল ব্যাংক নামে বাণিজ্যিক ব্যাংক হিসেবে কার্যক্রম শুরু করে।


তবে ব্যাপক অনিয়ম ধরা পড়ার পর ২০০৬ সালের জুনে কেন্দ্রীয় ব্যাংক ওরিয়েন্টাল ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ বিলুপ্ত করে দেয়। ওরিয়েন্টাল ব্যাংক থেকে আনুমানিক ৩৪ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগে ২০০৫ ও ২০০৬ সালে ৩৪টি মামলা হয়েছিল।


তখন বাংলাদেশ ব্যাংক এটির পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ নেয় এবং আমানতকারীদের অর্থ সুরক্ষার জন্য ব্যাংকের প্রশাসক হিসেবে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের একজন নির্বাহী পরিচালককে নিয়োগ দেওয়া হয়।


২০০৭ সালের আগস্টে ব্যাংকটির অধিকাংশ শেয়ার বিক্রির জন্য দরপত্র আহ্বান করে বাংলাদেশ ব্যাংক। তখন এশিয়া ও আফ্রিকায় ব্যাংকিং ব্যবসা পরিচালনাকারী সুইস আইসিবি গ্রুপের সঙ্গে দরপত্রে অংশ নেন দুজন দরদাতা।


২০০৮ সালে ব্যাংকটির নাম পরিবর্তন করে আইসিবি ইসলামিক ব্যাংক করা হয়।

ডেইলি স্টার ২৯/৩/২৪

Comments

Popular posts from this blog

Tejgaon college teacher recruitment job circular

Tejgaon college teacher recruitment circilar: Description: Tejgaon college is one of the famous college in dhaka city.The college is situated in tejgaon with a large campus having nice environment for education.Tejgaon college job circular is so much attractive to the educated job seeker of bangladesh.Tejgaon college is an equal opportunity employer.Recently tejgaon college published an attractive job circular in the daily Prothom alo 20 March 2019.In the circular teacher will be recruited in different post.Teacher will be recruited as per national university guideline for honours and masters course Job Title: Lecturer  Number of post: Biochemistry and molicular Biology:2(part time) Political science: 2(part time) Botany:2(part time) Islamic history : 2(part time) Social science : 2(part time) Salary and benefits: as per college policy Application Process: Interested candidates are requested send applicatio...

Hamdard laboratories job circular 2019.

Hamdard Laboratories  Job circular: Hamdard Bangladesh is the largest ayurvedic and unani medicine producer in bangladesh.Hamdard laboratories is a very famous co. in bangladesh for its various products.Hamdard laboratories is the pioneer in production of harbal,unani and ayurvedic medicine. Hamdard laboratories (waqf) bangladesh is producing different type of life saving medicine using latest state of art technology as per guidelines of WHO and GMP.As a very much popular company Hamdard laboratories job circular is very attractive job circular for the bangladeshi job seeker. Job Description: Hamdard laboratories job circular has been piblished in the daily prothom alo 15 March 2019.In the hamdard laboratories job circular stated that the company is going to recruit some young industrious self motivated employees for the growing business. Job Titles and Educational Qualification: 1.Medical Representative :Minimum graduate, Science up to SSC . 2.Sales Representat...

সমাজ কল্যান মন্ত্রনালয়ে বিভিন্ন পদে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি।

সমাজ কল্যান মন্ত্রনালয়ে চাকরির বিজ্ঞপ্তিঃ সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় বাংলাদেশের পিছিয়েপড়া এবং অনগ্রসর জনগোষ্ঠীর মানব সম্পদ উন্নয়ন, দারিদ্র্য বিমোচন, কল্যাণ, উন্নয়ন ও ক্ষমতায়ণ সাথে সংশ্লিষ্ট একটি অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয়। একটি কল্যাণ রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশ পরিচয় করিয়ে দিতে সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় বয়স্কভাতা, বিধবা ভাতা, প্রতিবন্ধী ভাতা, এসিডদগ্ধ ও প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের সহায়তা কার্যক্রম বাস্তবায়ন করছে। সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় একইসাথে দেশব্যাপী গ্রামীণ এবং শহুরে উভয় এলাকায় সমাজের পিছিয়েপরা, অনগ্রসর অংশ, বেকার, ভূমিহীন, অনাথ, দুঃস্থ, ভবঘুরে, নিরাশ্রয়, সামাজিক, বুদ্ধিমত্তা এবং শারীরিক প্রতিবন্ধী ব্যক্তি, দরিদ্র, অসহায় রোগী, ঝুঁকিপূর্ণ শিশুদের কল্যাণ ও উন্নয়নে বহুমাত্রিক এবং নিবিড় কার্যক্রমও বাস্তবায়ন করছে। কার্যক্রম বাস্তবায়নে অধিকতর গতিশীলতা ও স্বচ্ছতা আনয়নের লক্ষ্যে মন্ত্রণালয় দাতব্য পদ্ধতির পরিবর্তে গ্রহণ করেছে উন্নয়ন পদ্ধতি।পরিবার কেন্দ্রীক কর্মসূচি ও সঠিক কর্মপরিকল্পনা বাংলাদেশের মানুষের কাছে এ মন্ত্রণালয়কে করেছে জনপ্রিয়। সমাজ কল্যান মন্ত্রনালয়ে চাকরির ...