Skip to main content

এলাকায় দানবীর,চাকরি দাতা হিসাবেই পরিচিত বেসিক ব্যাংক কেলেঙ্কারির হোতা শেখ আব্দুল হাই বাচ্চু!

 



আলোচিত বেসিক ব্যাংক কেলেঙ্কারির হোতা ব্যাংকটির সাবেক চেয়ারম্যান (এমডি) শেখ আব্দুল হাই বাচ্চুর গ্রামের বাড়ি বাগেরহাট জেলার মোল্লাহাট উপজেলার আডুয়াডিহি গ্রামে। পুলিশের প্রয়াত উপপরিদর্শক শেখ আবদুল হামিদ ও ছাবেদা বেগম দম্পত্তির বড় ছেলে তিনি। তবে হাই পরিবারের কেউ এখানে থাকেন না। বাড়িটি ফাঁকাই পড়ে থাকে।


ঢাকা থেকে মাঝে মাঝে আব্দুল হাইয়ের ছোট ভাই পান্না এলাকায় আসেন। তবে রাতে কখনো থাকে এলাকায় থাকতে দেখা যায়নি। কয়েক বছর আগে বাড়ির ফটকের পূর্ব পাশে নিজেদের জমিতে মসজিদ করে দিয়েছেন তারা। গেটের ফাক দিয়ে তাকালে দেখা যায় ঢুকে বা‍‍` দিকে বিশাল কাছারি ঘর। সামনে খোলা জায়গা, তারপর সুসজ্জিত দোতলা বাড়ি।



 


আড়ুয়াডিহি মোল্লারহাট উপজেলায় পড়লেও পার্শ্ববর্তী চিতলমারী উপজেলায়ও আব্দুল হাই সমাধিক পরিচিত। মূলত সুন্দর এই বাড়িটি সবার-ই আগ্রহের জায়গা দখল করে রেখেছে। চার ভাই ও চার বোনের মধ্যে পরিবারের সবার বড় বাচ্চু। এলাকার সবাই তাকে চিনেন দানবীর, ভালো মানুষ হিসেবে। বেসিক ব্যাংকে এসব এলাকার অনেককে চাকরি দিয়েছেন তিনি।


আব্দুল হাই বাচ্চুর বিষয়ে স্থানীয় বেশ কয়েকজনের সাথে কথা হয় বাগেরহাট প্রতিনিধির। প্রতিবেশী অনেকেই ভয় পান তার বিষয়ে কথা বলতে। নাম না লেখার শর্তে ষাটোর্ধ্ব এক ব্যক্তি বলেন, আমার বাড়ি এই পাশেই। তারা বাড়ির সামনে মসজিদ করেছে। আমার বাড়ি থেকেও কাছে। তবে এ মসজিদে আমি যাই না, হেঁটে দূরে ওই মাথার মসজিদে যাই নামাজ পড়তে। আর কিছু বলবো না।




তাদের বাড়ির পূর্ব পাশের এক প্রতিবেশী বলেন, এসব মামলা টামলায় কিছুই হবে না। এইখানে স্কুল মাঠে মিটিংয়ে বাচ্চু সাহেব নিজেই বলছেন আমি যে পরিমাণ সম্পদ করে রেখে যাচ্ছি দুই চার প্রজন্ম খেয়ে শেষ করতে পারবে না।‌ তবে তেমন জমি জায়গা করেনি গ্রামে। ঢাকায় তাদের অনেক বাড়ি গাড়ি আছে। বিদেশেও বাড়ি আছে শুনছি। সবাই জানে ব্যাংক মারা টাকা। কিন্তু নানান কিছু পেয়ে কেউ মুখ খোলে না। কারন স্থানীয় প্রায় প্রতিটি পরিবারের-ই কাউকে না কাউকে চাকরি দিয়েছেন তিনি। পারিবারিক মসজিদের মুয়াজ্জিনের দুই মেয়ের স্বামীকেও চাকরি দিয়েছেন।


 


গ্রামের পশ্চিম পাড়ার কৃষক তরিকুল ইসলাম বলেন, তিনি এলাকায় অনেক কিছু করেছেন। মসজিদ মাদ্রাসা করেছেন, অনেক দান ধ্যান করেন। এই এলাকায় সবার উপকারই করেছেন। আমার এক চাচাত ভাই এর চাকরি দিছে। এলাকায় এলে আগে তো মানুষের লাইন পড়ে যেত। বড় বড় গাড়ি নিয়ে আসতো। তবে সাম্প্রতিক সময়ে আর আসে না।


 


স্থানীয়দের সাথে কথা বলে জানা যায়, সবশেষ এক বছর আগে গ্রামে এই বাড়িতে এসেছিলেন বাচ্চু। তবে তার ছোট ভাই আসেন প্রায় নিয়মিত। তবে এলাকার অধিকাংশ মানুষ-ই জানেন না বাচ্চুর বিরুদ্ধে দুদকের মামলা- চার্জশিটের বিষয়ে।তবে টিভি, পত্রিকার মাধ্যমে কেউ কেউ জেনেছেন অর্থ কেলেঙ্কারির খবর। পশ্চিম পাড়ার মোহাম্মদ বাপ্পি বলেন, বাচ্চু সাহেব তো এলাকায় তেমন আসে না। উনার ছোট ভাই আসেন। দান ধ্যান করেন। তবে শুনেছি এখন নাকি তারা একটু বিপদে পড়েছেন। তারা যাই করুক এলাকায় কিন্তু ভালোই করেছেন। শুনছি সে (বাচ্চু) নাকি বিদেশে আছে। তার ছোট ভাই পান্না সাহেব, যিনি জাহাজের ব্যবসা করেন দিন চারেক আগেও এসে গেছেন। বিপুল নামের অপর এক ব্যক্তি বলেন, চুরি করুক আর যাই করুক এলাকার অনেকের চাকরি দিয়েছেন তিনি।‌‌ চাকরি দেওয়ার জন্য কারো কাছ থেকে টাকা নেননি। স্বাধীনের পর এলাকায় তার বাবার নামে স্কুল হয়েছে। একটা জমিও নিয়েছিলেন কলেজ করবেন বলে। এলাকার উপকারই করেছেন অনেক।


 


তবে বাচ্চুর বিষয়ে কথা বলতে রাজি হননি স্থানীয় জনপ্রতিনিধি কেউ। এলাকাবাসীর দাবি বর্তমানে রাজনীতিতে সরাসরি যুক্ত না থাকলেও এরশাদ আমলের সংসদ সদস্য ও বাগেরহাট জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আব্দুল হাই বাচ্চু খুবই ঘনিষ্ঠ শেখ পরিবারের। সেই সূত্রে স্থানীয় চেয়ারম্যান ও মেম্বার মনোনয়ন থেকে নির্বাচনেও প্রভাব রয়েছে তার। এলাকায় এলে নেতারা ভরে যায়। মামলা হোক আর যাই হোক তার কিছুই হবে না বলে মনে করেন স্থানীয়রা।


 


আব্দুল হাই বাচ্চুর বাবা পাকিস্তান আমলে পুলিশে চাকরি করতেন। সন্তানদের জন্ম এখানে হলেও তারা বাইরেই বড় হয়েছে জানালেন তাদের বাড়িটির কেয়ারটেকার জাবের আলী শেখ। বাচ্চুর চাচাতো ভাইয়ের ছেলে জাবের আলী অবশ্য ওই বাড়িতে দেখাশোনা করার কথা অস্বীকার করেন। তিনি ও তার স্ত্রীর বলেন, তারা বড়লোক মানুষ, আমরা গরিব। আমাদের এক বংশ, তবে আমরা অনেক দূরের আত্মীয়। এখানে তাদের কেউ থাকেনা। তাদের ও আমাদের জন্য দোয়া করবেন।


জাতীয় পার্টি থেকে ১৯৮৬ সালের সংসদ নির্বাচনে বাগেরহাট-১ আসন (চিতলমারী, মোল্লাহাট ও ফকিরহাট) থেকে অংশ নিয়ে শেখ আব্দুল হাই বাচ্চু সংসদ সদস্য হয়েছিলেন। ওই সময় অতিরিক্ত দায়িত্ব হিসেবে ১৯৮৮ সালের ১২ অক্টোবর থেকে ১৯৯০ সালের ৬ নভেম্বর পর্যন্ত বাগেরহাট জেলা পরিষদের চেয়ারম্যানের দায়িত্বও পালন করেন তিনি। একই সময় তিনি ছিলেন বাগেরহাট জেলা জাতীয় পার্টির সভাপতি। ব্যক্তিগত জীবনে আবদুল হাই স্ত্রী ও দুই সন্তানকে নিয়ে ঢাকায় থাকতেন। তার অন্য ভাই-বোনেরা হলেন শেখ ওয়াহিদুজ্জামান, শেখ খালেকুজ্জামান, শেখ শাহরিয়ার পান্না, শেখ সায়িদা ভুলু, শেখ মমতাজ রুমি, শেখ শিউলি ও শেখ জনি।

সূত্র: একুশে সংবাদ 

Comments

Popular posts from this blog

ডাচ বাংলা ব্যাংকের ৩৯ গ্রাহকের দেড় কোটি টাকা উধাও!

প্রতারণা ও জাল-জালিয়াতির মাধ্যমে অবৈধ প্রক্রিয়ায় ৩৯ জন গ্রাহকের মোট এক কোটি ৫৩ লাখ ৫০ হাজার টাকা আত্মসাতের অভিযোগে ডাচ বাংলা ব্যাংকের এজেন্টসহ পাঁচজনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। বৃহস্পতিবার (১২ সেপ্টেম্বর) দুদকের রংপুর জেলা কার্যালয়ে সংস্থাটির উপপরিচালক মো. মোস্তাফিজুর রহমান বাদী হয়ে মামলাটি দায়ের করেন। সংস্থাটির একটি সূত্র বিষয়টি নিশ্চিত করেছে। মামলার আসামিরা হলেন- মেসার্স শিরিন ট্রেডার্সের মালিক ও ডাচ বাংলা ব্যাংকের এজেন্ট মোছা. জোবেদা বেগম, তার স্বামী মো. আবুল কালাম আজাদ, তার মেয়ের জামাই এ.বি.এম আতাউর রহমান, এজেন্ট ব্যাংকের কর্মচারী মো. শাহজাহান ও জাহাঙ্গীর আলম।   এজাহার সূত্রে জানা যায়, আসামিরা পরস্পর যোগসাজশে বিভিন্ন অপকৌশল ও অসৎ উদ্দেশ্যে ডাচ্ বাংলা ব্যাংক লিমিটেডের এজেন্ট ব্যাংকিং কার্যক্রমের আড়ালে প্রতারণা ও জাল-জালিয়াতির মাধ্যমে অবৈধ প্রক্রিয়ায় ৩৯ জন গ্রাহকের মোট এক কোটি ৫৩ লাখ ৫০ হাজার টাকা আত্মসাৎ করেছেন। মোছা. জোবেদা বেগম ও তার স্বামী ২০১৮ সালের অক্টোবরে ডাচ বাংলা ব্যাংকের এজেন্ট হিসেবে কার্যক্রম শুরু করে বিভিন্ন গ্রাহকের কাছ থেকে এফডিআর খুলে...

সোনালী ব্যাংককে এক কোটি রুপি জরিমানা করল ভারতের কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

  লেনদেনের বিধি ও নির্দেশনা লঙ্ঘন করায় বাংলাদেশের সোনালী ব্যাংককে ৯৬ লাখ ৪০ হাজার রুপি জরিমানা করেছে ভারতের কেন্দ্রীয় ব্যাংক রিজার্ভ ব্যাংক অব ইন্ডিয়া (আরবিআই)। মুম্বাইভিত্তিক সেন্ট্রাল ব্যাংক অব ইন্ডিয়াকেও একই অভিযোগে ১ কোটি ৫০ লাখ রুপি জরিমানা করা হয়েছে। খবর হিন্দুস্তান টাইমসের। মুম্বাইয়ের ব্যাংকটির বিরুদ্ধে ঋণসংক্রান্ত নির্দেশনা মেনে চলতে ব্যর্থ হওয়া, অগ্রিম লেনদেনে ত্রুটি এবং গ্রাহক সুরক্ষা দিতে ব্যর্থতার অভিযোগ আনা হয়েছে। আর সোনালী ব্যাংককের বিরুদ্ধে অসংগতিপূর্ণ লেনদেনে সতর্কতা অবলম্বন করার ব্যর্থতার অভিযোগ রয়েছে। এ ছাড়া ব্যাংকটির বিরুদ্ধে সুইফট সম্পর্কিত কার্যক্রম নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থতার অভিযোগও তোলা হয়েছে।  ২০২২ সালের ৩১ মার্চ থেকে চলমান একটি পর্যবেক্ষণের ফল হিসেবে এই জরিমানা করেছে আরবিআই। পর্যবেক্ষণে বেশ কিছু অসংগতিপূর্ণ আচরণ ধরা পড়ে। এ কারণে ব্যাংক দুটিকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হয়েছিল।  সরকারের ভর্তুকির বিপরীতে একটি প্রতিষ্ঠানকে ঋণের অনুমোদন দিয়েছিল মুম্বাইভিত্তিক সেন্ট্রাল ব্যাংক অব ইন্ডিয়া। এ ছাড়া অননুমোদিত ই–লেনদেনের সঙ্গেও যুক্ত ছিল ব্যাংকটি। ...

এস আলমের কাজের মেয়ের হিসাবে কোটি কোট টাকা?

  বিতর্কিত ব্যবসায়ী এস আলম গ্রুপের মালিক সাইফুল আলমের কাজের মেয়েও কোটিপতি। শীর্ষ ব্যবসায়ী এস আলমের গৃহকর্মী মর্জিনা আক্তারের নামে ৫ কোটি টাকার সম্পত্তি ছাড়াও মিলেছে বিপুল পরিমাণ সম্পদের খোঁজ। পেশায় গৃহকর্মী হলেও মর্জিনার নামে দু’টি ব্যাংক অ্যাকাউন্টে লেনদেন হয়েছে আড়াই কোটি টাকা। এছাড়া মর্জিনার নামে কয়েকটি ব্যাংকে ২২টি এফডিআর’এ থাকা এক কোটি টাকা জমা রাখার সন্ধান পাওয়া গেছে। ইসলামী ব্যাংকে চাকরি দেখিয়ে নিজ নামে এ সম্পদ গড়েছে মর্জিনা আক্তার ও তার স্বামী সাদ্দাম হোসেন।  বাংলাদেশ ব্যাংকের আর্থিক গোয়েন্দা ইউনিট (বিএফআইইউ) এবং জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) অনুসন্ধানে বেরিয়ে এসেছে এসব তথ্য। এতে দেখা যায়, চট্টগ্রামে ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকের প্রবর্তক মোড় শাখায় মর্জিনা আক্তারের নামে গত ২৭ আগস্ট পর্যন্ত এক কোটি ৮৪ লাখ ১৬ হাজার ৭২১ কোটি টাকার লেনদেন হয়েছে। বিভিন্ন সময়ে নগদ ও চেকের মাধ্যমে এসব অর্থ জমা হলেও কিছুদিনের মধ্যে সেই অর্থ উত্তোলন করা হয়। কোটি কোটি টাকার লেনদেন হলেও সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী মর্জিনা আক্তারের ব্যাংক হিসাবে এখন জমা আছে মাত্র ৬০৫ টাকা। অন্যদ...