ব্যাংক একীভূতকরণ করা থেকে পিছু হটল বাংলাদেশ ব্যাংক।




 চাপ দিয়ে দুর্বল ১০ ব্যাংকের সাথে সবল ১০টি ব্যাংকের মার্জার বা একীভূতকরণের পরিকল্পনা নিয়েও– বিস্ময়করভাবেই এই উদ্যোগ থেকে সরে এসেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। ব্যাংকিং শিল্পের সংশ্লিষ্টরা জানান, এই সিদ্ধান্তে সংশ্লিষ্ট ব্যাংকগুলোর ভীত গ্রাহকদের আমানত তোলার হিড়িক এবং ব্যাংকের পরিচালকসহ প্রভাবশালীদের চাপের মুখে কেন্দ্রীয় ব্যাংক শেষপর্যন্ত পিছু হটার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।


গত সোমবার কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মেজবাউল হক জানান, ইতোমধ্যেই যে পাঁচটি একীভূতকরণের ঘোষণা দেওয়া হয়েছে, তার বাইরে আগামী তিন বছরে নতুন কোনো ব্যাংক মার্জারের অনুমোদন হবে না। 


বাংলাদেশ ব্যাংকের হঠাৎ এই সিদ্ধান্ত পরিবর্তনের কারণ নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডের অনুসন্ধানে বেশকিছু ব্যাংকের গ্রাহকদের আমানত ব্যাপকভাবে তুলে নেয়ার খবর উঠে এসেছে।


যেমন বলা যায় বেসিক ব্যাংকের কথা। এই ব্যাংকটি একীভূত হতে চলেছে সিটি ব্যাংকের সাথে। এই তথ্য গণমাধ্যমে আসার পর ব্যাংকের বড় বড় আমানতকারীরা চিঠি দিয়ে আমানত তুলে নেয়ার ইচ্ছেপোষণ করেছেন বলে জানান বেসিক ব্যাংকের ভারপ্রাপ্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) আবু মোহাম্মদ মোফাজ্জল। 


তিনি বলেন, "বুধবার আমাদের বোর্ড সভায় সিদ্ধান্ত হয়েছে, যে মার্জারের সিদ্ধান্তের ফলে গ্রাহকরা ডিপোজিট (আমানত) তুলে নেয়া শুরু করেছে। এতে আমাদের তারল্য সংকট তৈরি হয়েছে। আমরা সার্বিক এই ক্ষতির বিষয়টি আমাদের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষর কাছে তুলে ধরব।" 


একইভাবে রাষ্ট্রায়ত্ত সোনালী ব্যাংকের সাথে একীভূত হতে চলা আরেকটি রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান– ব্যাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক লিমিটেড (বিডিবিএল); এবং কৃষি ব্যাংকের সাথে একীভূত হতে চলা রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক (রাকাব)-ও গ্রাহকের আমানত তুলে নেয়ার চাপের মুখে পড়েছে। 


রাকাবের সিনিয়র এক কর্মকর্তা বলেন, "হঠাৎ গ্রাহকদের এভাবে আমানত তুলে নেয়ার প্রবণতাটি অব্যাহত থাকলে– সংকট আরও বাড়বে।" 


বেসরকারি খাতের ন্যাশনাল ব্যাংক লিমিটেড (এনবিএল) একীভূত হবে অপর বেসরকারি ঋণদাতা ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংকের সাথে। এই ব্যাংকেও মার্জারের সিদ্ধান্তে নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। সম্প্রতি পরিচালনা পর্ষদ পুনর্গঠন করা সত্ত্বেও – একীভূতকরণের প্রস্তাবে বোর্ডের থেকে অনুমোদন নিতে পারেনি।


ন্যাশনাল ব্যাংকের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা টিবিএসকে বলেন, গত দুইমাস আগে ব্যাংকটির চেয়ারম্যান থেকে শুরু করে একাধিক পরিচালক পদ পুনর্গঠন করা হয়েছে। "কিন্তু, একীভূত করার সিদ্ধান্তে নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে।" 


তিনি আরো বলেন, বোর্ড পুনর্গঠনের পর ব্যাংকের অনেক সূচক ভালোর দিকে আসছে। তবে সূচকগুলো আরও ভালোর দিকে নিতে আরও বছর খানেক সময় প্রয়োজন। 


"এরই মধ্যে জোরপূর্বক একীভূত করার কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সিদ্ধান্তে নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। অনেক গ্রাহক আমাদের ব্যাংকে আসছেন তাদের জমা টাকা তোলার জন্য"- যোগ করেন তিনি।


সূত্র : দি বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড বাংলা।

Post a Comment

0 Comments