ব্যাংক ও আর্থিক খাতে আমানত সংগ্রহে চলছে অসুস্থ প্রতিযোগিতা। কোনো কোনো দুর্বল ব্যাংক সর্বোচ্চ ১৩-১৪ শতাংশ পর্যন্ত সুদ অফার করছে। এ ধরনের উচ্চ সুদে আমানত নিলে সে প্রতিষ্ঠানকে বিদ্যমান বিধান অনুযায়ী কমপক্ষে ১৬-১৭ শতাংশ সুদে ঋণ দিতে হবে। এছাড়া কয়েকটি দুর্বল নন-ব্যাংক আর্থিক প্রতিষ্ঠান আমানত পেতে সর্বোচ্চ ১৭-১৮ শতাংশ পর্যন্ত সুদ প্রস্তাব করছে। সেক্ষেত্রে ঋণ দিতে হবে ২০-২১ শতাংশ সুদে। এই অসম প্রতিযোগিতার কারণে ঋণের সুদও বেড়ে যাচ্ছে। এতেবিপাকে পড়ছেন ঋণগ্রহীতারা।
এছাড়া উচ্চ সুদের এ টাকা ফেরত আসবে কি না-সে বিষয়ে কোনো নিশ্চয়তা নেই-এমন শঙ্কা সংশ্লিষ্টদের। তাদের মতে-ইতোপূর্বে যত অনিয়ম হয়েছে, সেখানে দেখা গেছে লোভনীয় অফারে আমানত নিয়ে পরে সুদ-আসল দুটোই খোয়া গেছে।
অর্থাৎ এভাবে অস্বাভাবিক সুদে আমানত নিলে সেখানে সুদ তো দূরে থাক, মূল টাকাও ফেরত পাওয়ার আশা নেই। জানতে চাইলে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহ উদ্দিন আহমেদ যুগান্তরকে বলেন, মূল্যস্ফীতি কমাতে এখন আমানত ও ঋণে সুদের হার বাড়ছে, এটা ঠিক। সেটা সর্বোচ্চ ১২-১৩ পর্যন্ত যেতে পারে।
তবে ১৭-১৮ শতাংশ সুদে আমানত নিয়ে ব্যবসা করলে সে ব্যবসা টিকবে না। আর যদি এটা দীর্ঘমেয়াদি গৃহঋণে খাটানো হয় তাহলে সে ঋণগ্রহীতা জানে মারা যাবে। তিনি বলেন, আমানতকারীদের সাবধান হতে হবে। কেউ অফার করলেই চলে যাওয়া যাবে না। দেখতে হবে ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানটা কেমন। যাচাই-বাছাই ছাড়া আমানত রাখলে বিপদ হবে।
অগ্রণী ব্যাংকের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) সৈয়দ আবু নাসের বখতিয়ার আহমেদ যুগান্তরকে বলেন, এটা যদি ঘটে থাকে, সেটি হবে বিরাট অশনি সংকেত। উচ্চসুদে আমানত নিয়ে লুটতরাজ হবে। দেশে এমন কোনো ব্যবসা নেই, যা দিয়ে আমানতের এ টাকা পরিশোধ করতে পারবে।
এছাড়া অন্য একটি বেসরকারি ব্যাংকের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) যুগান্তরকে বলেন, 'এখন যেটা চলছে এটাকে প্রতিযোগিতা বলে না। একীভূত হওয়ার ভয়ে কয়েকটি দুর্বল ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান আমানতের জন্য মরিয়া হয়ে গেছে। একটি নন-ব্যাংক আর্থিক প্রতিষ্ঠান আমাকেও ১৮ শতাংশ সুদে আমানতের অফার করেছে। এটা দেখে অবাক হয়েছি। আসলে দেশে এত ব্যাংক এবং আর্থিক প্রতিষ্ঠানের প্রয়োজন নেই। তার মতে, প্রতিযোগিতার বাজারে প্রাকৃতিক নিয়মে যে টিকে থাকার থাকুক কিন্তু কৃত্রিমভাবে কোনো ব্যাংক ও নন-ব্যাংক আর্থিক প্রতিষ্ঠান বাঁচিয়ে রাখার দরকার নেই। তাহলেই বেশির ভাগ সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে।
বিভিন্ন ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, চতুর্থ প্রজন্মের একটি দুর্বল ব্যাংক ১০ বছর মেয়াদি আমানতে সুদ অফার করেছে।
১৩ শতাংশ। এছাড়া একটি নন-ব্যাংক আর্থিক প্রতিষ্ঠান এক বছর মেয়াদি আমানত নিচ্ছে ১২ শতাংশে। আমানতের অঙ্ক কোটি টাকার ওপরে হলে সুদহার হবে ১৩ শতাংশ।
এভাবেই টাকার অঙ্ক ও মেয়াদ বাড়লে সুদের হার ১৪, ১৫, ১৬, ১৭, ১৮ শতাংশ পর্যন্ত উঠেছে। এটা আনুষ্ঠানিক কোনো অফার নয়। ব্যক্তি থেকে ব্যক্তিকে এসব অফার অত্যন্ত গোপনীয়তার মাধ্যমে দেওয়া হচ্ছে।
কখনো কখনো ক্ষুদে বার্তার মাধ্যমেও এসব লোভনীয় অফার দেওয়া হয়। নাম প্রকাশ না করার শর্তে একটি নন-ব্যাংক আর্থিক প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) যুগান্তরকে বলেন, শুধু কয়েকটি দুর্বল প্রতিষ্ঠান উচ্চ সুদে আমানত নিচ্ছে। এতে আমানতকারীরা বুঝুঁকিতে পড়বেন। সে জন্য আমানতকারীদের সতর্ক হতে হবে।
যুগান্তর ১২ মার্চ ২০২৪।
Comments
Post a Comment