Skip to main content

এক জমি তিন ব্যাংকে বন্ধক!

 


আত্মগোপনে থাকা জাহাজ ভাঙা ও ইস্পাত খাতের ঋণখেলাপি ব্যবসায়ী মিজানুর রহমান শাহিন এবং মজিবুর রহমান মিলনের মালিকানাধীন চট্টগ্রামের আগ্রাবাদে নির্মাণাধীন স্যানমার হোটেল লিমিটেড। হোটেলসহ তাদের মালিকানাধীন সিলভিয়া গ্রুপের একাধিক সহযোগী প্রতিষ্ঠানের ঋণের বিপরীতে হোটেলটির জমি কয়েকটি ব্যাংকের আগ্রাবাদ শাখায় বন্ধকিতে আছে। এর মধ্যে মার্কেন্টাইল ব্যাংকের পাওনা ১৭৫ কোটি, সাউথইস্ট ব্যাংকের ২৪৫ কোটি এবং ইস্টার্ন ব্যাংকের ৭৫ কোটি টাকা। আর ব্যাংকগুলো বিপুল পরিমাণের ঋণ আদায় নিয়ে বিপাকে রয়েছে।



সংশ্লিষ্ট ব্যাংক সূত্রে জানা যায়, আগ্রাবাদ বাণিজ্যিক

এলাকার ২১/১ হোল্ডিংয়ে ৪৭ দশমিক ৫২ শতক ভূমির ওপর ৯ তলাবিশিষ্ট স্যানমার হোটেল ভবন। এ ভবনের গ্রাউন্ড ফ্লোর ও লেভেল ওয়ানে পাঁচ হাজার বর্গফুট এবং লেভেল টু থেকে লেভেল এইট পর্যন্ত ৮৮ হাজার ৫৫০ বর্গফুট। অর্থাৎ প্রতি ফ্লোর ১২ হাজার ৬৪৫ বর্গফুট করে আছে। হোটেলটি নির্মাণে অর্থায়ন করেছিল মার্কেন্টাইল ব্যাংক আগ্রাবাদ শাখা। 



বর্তমানে প্রতিষ্ঠানের কাছে ব্যাংকটির সুদাসলে মোট পাওনা ১৭৪ কোটি ৯ লাখ ৩১ হাজার ২৬০ টাকা। এ খেলাপি ঋণ আদায়ে মার্কেন্টাইল ব্যাংক আগ্রাবাদ শাখা অর্থঋণ আদালতে মামলা করেছিল। এরপর ২০২১ সালে জারি মামলাও করেছিল। এ মামলায় অর্থঋণ আদালত পাওনা আদায়ে ভবনটি বিক্রির উদ্যোগ নিয়েছিল। কিন্তু বিক্রি হয়নি।


স্যানমার হোটেল ছাড়া সিলভিয়া গ্রুপের আরও কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের কাছে মার্কেন্টাইল ব্যাংকের প্রায় ৩৫৫ কোটি টাকা অনাদায়ী ঋণ আছে। অপরদিকে সাউথইস্ট ব্যাংকের সিলভিয়া গ্রুপের আহম্মেদ মুস্তবা স্টিল ইন্ডাস্ট্রিজ, মিজানুর রহমান শাহিন, মুজিবুর রহমান সিলভিয়া গ্রুপের একাধিক সহযোগী প্রতিষ্ঠানের ঋণের বিপরীতে হোটেলটির জমি কয়েকটি ব্যাংকের আগ্রাবাদ শাখায় বন্ধকিতে আছে। এর মধ্যে মার্কেন্টাইল ব্যাংকের পাওনা ১৭৫ সাউথইস্ট ব্যাংকের ২৪৫ কোটি এবং  ইস্টার্ন ব্যাংকের ৭৫ কোটি টাকা।


মিলন এবং স্যানমার হোটেলের নামে ২৪৫ কোটি খেলাপি ঋণ আছে। এসব ঋণের বিপরীতে হোটেলের কিছু জমি অর্থাৎ ভবনটির গ্র্যান্ড ফ্লোর ও লেভেল ওয়ানে ৭ হাজার ৫৬৯ বর্গফুট সাউথইস্ট ব্যাংকে বন্ধকি হিসেবে আছে। আর আহম্মেদ মুস্তবা স্টিল ইন্ডাস্ট্রিজ, মুজিবুর রহমান মিলন এবং স্যানমার হোটেলের নামে ভবনটির গ্রাউন্ড ফ্লোর ও লেভেল ওয়ান থেকে ফাইভ পর্যন্ত কিছু অংশে ১১ হাজার ২০৬ বর্গফুট জায়গার বিপরীতে ৭৫ কোটি ৮৮ লাখ টাকা খেলাপি ঋণ আছে ইস্টার্ন ব্যাংক

আগ্রাবাদ শাখায়। ব্যবসায়ী মজিবুর রহমান মিলন, মিজানুর রহমান শাহিন ও হুমায়ুন কবির তিন সহোদর।



 তারা মিশম্যাপ শিপ ব্রেকিং, ফয়জুন শিপ ব্রেকিং, মিশম্যাক ডেভেলপমেন্ট, মিশম্যাক ল্যান্ডস ডেভেলপমেন্ট, মিশকাত শিপ ব্রেকিং ইন্ডাস্ট্রি, মিশুটিন শিপ ব্রেকিং ইন্ডাস্ট্রি, ফয়জুন ট্রেডার্স, ফয়জুন অক্সিজেন প্লান্ট, ফয়জুন এসিথিলিনে

প্লান্ট, মিশম্যাক এগ্রো ইন্ডাস্ট্রি ও আহমেদ মোস্তফা রি-রোলিং মিল, আহমেদ মোস্তফা স্টিল ইন্ডাস্ট্রিজ, আহমেদ মোস্তফা গ্যালভানাইজিং প্লান্ট, স্যানমার হোটেলসহ একাধিক ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের সমন্বয়ে গড়ে তোলেন সিলভিয়া গ্রুপ। এসব প্রতিষ্ঠানের নামে নেয়া বিভিন্ন ব্যাংক থেকে প্রায় ৯০০ কোটি টাকা ঋণ এখন খেলাপি; যা বর্তমানের সুদাসলে প্রায় দেড় হাজার কোটি টাকা। আর ঋণখেলাপি হওয়ার আগেই তারা দেশ ছেড়েছেন। একজন আছেন কানাডায়, অন্যজন সিঙ্গাপুরে। অন্যজনের অবস্থান জানা যায়নি।


গতকাল সরেজমিন দেখা যায়, মার্কেন্টাইল ব্যাংক আগ্রাবাদ শাখার বিল্ডিংটির ওপরে স্যানমার হোটেলের অবস্থন। ভবনটি অবকাঠামোগত কাজ শেষ হলেও ফিনিশিংয়ের কাজ শুরু হয়নি। মূলত মালিকপক্ষ পলাতক হওয়ার পর থেকে ভবনটির নির্মাণের সব কাজ বন্ধ হয়ে পড়ে। ভবনটির সামনে বসা একাধিক হকার জানান, শুনেছি ভবনটির মালিকের সঙ্গে ঋণ নিয়ে ব্যাংকের ঝামেলা আছে। তাই আর কাজ শেষ করতে পারেনি।


চট্টগ্রামের কয়েকটি ব্যাংকের শাখা কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, তিন ভাইয়ের অর্থ পাচারের বিষয়টি পরিষ্কার। তাদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন ব্যাংকের শতাধিক মামলা আছে। এসব মামলার মধ্যে কয়েকটির রায়ও হয়েছে। আরও কিছু সামনে রায় হবে। তবে তারা ব্যাংকের পাওনা পরিশোধে আগ্রহ দেখাচ্ছে না। মার্কেন্টাইল ব্যাংকে এক কর্মকর্তা জানান, সিলভিয়া গ্রুপ তাদের স্যানমার হোটেলের জমির বিপরীতে একাধিক ব্যাংক থেকে ঋণ নেন। একই জমি হলেও বিভিন্ন বিভিন্ন ভাগে একাধিক ব্যাংকে


বন্ধকি দেয়া হয়। জমির দামের তুলনায় ঋণ

বিতরণ বেশি হয়েছিল। যদিও ২০১২-১৩ সালের

পর তাদের পতন শুরু হয়। মালিকরা গত চার-

পাঁচ বছর ব্যাংকের সঙ্গে যোগাযোগ করছেন না।

শেয়ার বিজ ৩১/৩/২৪

Comments

Popular posts from this blog

ডাচ বাংলা ব্যাংকের ৩৯ গ্রাহকের দেড় কোটি টাকা উধাও!

প্রতারণা ও জাল-জালিয়াতির মাধ্যমে অবৈধ প্রক্রিয়ায় ৩৯ জন গ্রাহকের মোট এক কোটি ৫৩ লাখ ৫০ হাজার টাকা আত্মসাতের অভিযোগে ডাচ বাংলা ব্যাংকের এজেন্টসহ পাঁচজনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। বৃহস্পতিবার (১২ সেপ্টেম্বর) দুদকের রংপুর জেলা কার্যালয়ে সংস্থাটির উপপরিচালক মো. মোস্তাফিজুর রহমান বাদী হয়ে মামলাটি দায়ের করেন। সংস্থাটির একটি সূত্র বিষয়টি নিশ্চিত করেছে। মামলার আসামিরা হলেন- মেসার্স শিরিন ট্রেডার্সের মালিক ও ডাচ বাংলা ব্যাংকের এজেন্ট মোছা. জোবেদা বেগম, তার স্বামী মো. আবুল কালাম আজাদ, তার মেয়ের জামাই এ.বি.এম আতাউর রহমান, এজেন্ট ব্যাংকের কর্মচারী মো. শাহজাহান ও জাহাঙ্গীর আলম।   এজাহার সূত্রে জানা যায়, আসামিরা পরস্পর যোগসাজশে বিভিন্ন অপকৌশল ও অসৎ উদ্দেশ্যে ডাচ্ বাংলা ব্যাংক লিমিটেডের এজেন্ট ব্যাংকিং কার্যক্রমের আড়ালে প্রতারণা ও জাল-জালিয়াতির মাধ্যমে অবৈধ প্রক্রিয়ায় ৩৯ জন গ্রাহকের মোট এক কোটি ৫৩ লাখ ৫০ হাজার টাকা আত্মসাৎ করেছেন। মোছা. জোবেদা বেগম ও তার স্বামী ২০১৮ সালের অক্টোবরে ডাচ বাংলা ব্যাংকের এজেন্ট হিসেবে কার্যক্রম শুরু করে বিভিন্ন গ্রাহকের কাছ থেকে এফডিআর খুলে...

সোনালী ব্যাংককে এক কোটি রুপি জরিমানা করল ভারতের কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

  লেনদেনের বিধি ও নির্দেশনা লঙ্ঘন করায় বাংলাদেশের সোনালী ব্যাংককে ৯৬ লাখ ৪০ হাজার রুপি জরিমানা করেছে ভারতের কেন্দ্রীয় ব্যাংক রিজার্ভ ব্যাংক অব ইন্ডিয়া (আরবিআই)। মুম্বাইভিত্তিক সেন্ট্রাল ব্যাংক অব ইন্ডিয়াকেও একই অভিযোগে ১ কোটি ৫০ লাখ রুপি জরিমানা করা হয়েছে। খবর হিন্দুস্তান টাইমসের। মুম্বাইয়ের ব্যাংকটির বিরুদ্ধে ঋণসংক্রান্ত নির্দেশনা মেনে চলতে ব্যর্থ হওয়া, অগ্রিম লেনদেনে ত্রুটি এবং গ্রাহক সুরক্ষা দিতে ব্যর্থতার অভিযোগ আনা হয়েছে। আর সোনালী ব্যাংককের বিরুদ্ধে অসংগতিপূর্ণ লেনদেনে সতর্কতা অবলম্বন করার ব্যর্থতার অভিযোগ রয়েছে। এ ছাড়া ব্যাংকটির বিরুদ্ধে সুইফট সম্পর্কিত কার্যক্রম নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থতার অভিযোগও তোলা হয়েছে।  ২০২২ সালের ৩১ মার্চ থেকে চলমান একটি পর্যবেক্ষণের ফল হিসেবে এই জরিমানা করেছে আরবিআই। পর্যবেক্ষণে বেশ কিছু অসংগতিপূর্ণ আচরণ ধরা পড়ে। এ কারণে ব্যাংক দুটিকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হয়েছিল।  সরকারের ভর্তুকির বিপরীতে একটি প্রতিষ্ঠানকে ঋণের অনুমোদন দিয়েছিল মুম্বাইভিত্তিক সেন্ট্রাল ব্যাংক অব ইন্ডিয়া। এ ছাড়া অননুমোদিত ই–লেনদেনের সঙ্গেও যুক্ত ছিল ব্যাংকটি। ...

এস আলমের কাজের মেয়ের হিসাবে কোটি কোট টাকা?

  বিতর্কিত ব্যবসায়ী এস আলম গ্রুপের মালিক সাইফুল আলমের কাজের মেয়েও কোটিপতি। শীর্ষ ব্যবসায়ী এস আলমের গৃহকর্মী মর্জিনা আক্তারের নামে ৫ কোটি টাকার সম্পত্তি ছাড়াও মিলেছে বিপুল পরিমাণ সম্পদের খোঁজ। পেশায় গৃহকর্মী হলেও মর্জিনার নামে দু’টি ব্যাংক অ্যাকাউন্টে লেনদেন হয়েছে আড়াই কোটি টাকা। এছাড়া মর্জিনার নামে কয়েকটি ব্যাংকে ২২টি এফডিআর’এ থাকা এক কোটি টাকা জমা রাখার সন্ধান পাওয়া গেছে। ইসলামী ব্যাংকে চাকরি দেখিয়ে নিজ নামে এ সম্পদ গড়েছে মর্জিনা আক্তার ও তার স্বামী সাদ্দাম হোসেন।  বাংলাদেশ ব্যাংকের আর্থিক গোয়েন্দা ইউনিট (বিএফআইইউ) এবং জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) অনুসন্ধানে বেরিয়ে এসেছে এসব তথ্য। এতে দেখা যায়, চট্টগ্রামে ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকের প্রবর্তক মোড় শাখায় মর্জিনা আক্তারের নামে গত ২৭ আগস্ট পর্যন্ত এক কোটি ৮৪ লাখ ১৬ হাজার ৭২১ কোটি টাকার লেনদেন হয়েছে। বিভিন্ন সময়ে নগদ ও চেকের মাধ্যমে এসব অর্থ জমা হলেও কিছুদিনের মধ্যে সেই অর্থ উত্তোলন করা হয়। কোটি কোটি টাকার লেনদেন হলেও সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী মর্জিনা আক্তারের ব্যাংক হিসাবে এখন জমা আছে মাত্র ৬০৫ টাকা। অন্যদ...