আতঙ্কে বেসিক ব্যাংক থেকে টাকা তোলার হিড়িক!

 



শতভাগ রাষ্ট্র মালিকানাধীন বাণিজ্যিক ব্যাংক বেসিক ব্যাংক লিমিটেডকে বেসরকারি সিটি ব্যাংকের সঙ্গে একীভূত করার ঘোষণা দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এ নিয়ে বেসিক ব্যাংকের কর্মকর্তা ও গ্রাহকদের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে। 

এখন ব্যাংকটি থেকে সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত ও বড় করপোরেট গ্রাহকেরা স্থায়ী আমানত (এফডিআর) নগদায়ন শুরু করেছে।  এত ব্যাংকটিতে বাড়তি চাপ সৃষ্টি হয়েছে। অন্য গ্রাহকেরাও আমানত তুলে নিতে মরিয়ে হয়ে উঠেছেন। এক সঙ্গে এত নগদ টাকার চাহিদা মেটানো ব্যাংকটির পক্ষে সম্ভব না। আর গ্রাহকের টাকা দিতে না পারলে এই একীভূতের কারণে সৃষ্ট নেতিবাচক প্রভাব পুরো ব্যাংক খাতের ওপর পড়বে বলে মনে করছে ব্যাংকটির পরিচালনা পর্ষদ।

প্রাপ্ত কাগজপত্র পর্যালোচনায় দেখা গেছে, শাহজালাল ফার্টিলাইজার কোম্পানি লিমিটেডের পক্ষ থেকে ব্যবস্থাপনা পরিচালক (চলতি দায়িত্ব) মোহাম্মদ জিয়াবুল হোসেন স্বাক্ষরিত চিঠিতে এফডিআর সুদ–আসলসহ ১০ কোটি টাকা নগদায়নের জন্য দরখাস্ত দিয়েছেন। গত ১৫ এপ্রিল বেসিক ব্যাংকের মিরপুর শাখার ব্যবস্থাপককে ওই দরখাস্ত দেওয়া হয়। পত্রে বেসিক ব্যাংকে বেসরকারি সিটি ব্যাংকের সঙ্গে একীভূত করার সিদ্ধান্তকে এফডিআর নগদায়নের কারণ বলে উল্লেখ করা হয়েছে। 


শাহজালাল ফার্টিলাইজার কোম্পানি লিমিটেডের পর্ষদ সভায় বেসরকারি ব্যাংকে এফডিআর না রাখার সিদ্ধান্তের আলোকে নগদায়ন করা হচ্ছে বলে চিঠিতে উল্লেখ করেছেন ব্যবস্থাপনা পরিচালক। 


সূত্র জানায়, বেসিক ব্যাংক কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কোনো প্রকার আলোচনা না করেই কেন্দ্রীয় ব্যাংক চাপ দিয়ে সিটি ব্যাংকের সঙ্গে একীভূত করার ঘোষণা দিয়েছে। এরপরই কয়েক শ কোটি টাকার আমানত তুলে নেওয়ার আবেদন পড়েছে, যা ব্যাংকটির পক্ষে পরিশোধ করা প্রায় অসম্ভব। আর এফডিআরের টাকা দিতে না পারলে বেসিকসহ অন্যান্য ব্যাংকের ওপর এর দায় পড়ার সম্ভাবনা রয়েছে। 


এ বিষয়ে জানতে চাইলে বেসিক ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (চলতি দায়িত্ব) এবং ডিএমডি আবু মো. মোফাজ্জাল আজকের পত্রিকাকে বলেন, পর্ষদ সভায় বেসিক ব্যাংক একীভূত হওয়া সম্পর্কে গণমাধ্যমে প্রকাশিত খবরে উদ্বেগ জানানো হয়। একই সঙ্গে একটি শতভাগ সরকারি ব্যাংকে কীভাবে কেন্দ্রীয় ব্যাংকর একজন দায়িত্বশীল নির্বাহী কর্মকর্তা ব্যাংকটিকে সরকারি বলতে অস্বীকৃতি জানান সেই ধূম্রজাল রোধে করণীয় ইস্যুতে আলোচনা হয়। এ ছাড়া ব্যাংকের প্রতি গ্রাহকের আস্থা কমে আমানত উত্তোলনের চাপ সামলানো নিয়েও কথা হয়। গভর্নর এবং অর্থমন্ত্রী বিদেশে থাকায় এ বিষয়ে সমাধানে বিলম্ব হচ্ছে। গ্রাহকের আস্থা ধরে রাখতে যা যা করা দরকার সেসব করার সিদ্ধান্ত হয় বৈঠকে। 


বুধবার বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত খবরে জানা যায়, বেসিক ব্যাংক লিমিটেডকে সরকারি ব্যাংক হিসেবে গণ্য করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছেন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক মো. মেজবাউল হক। 


মেজবাউল হক বলেন, বেসিক সরকারের কোনো ব্যাংক অর্ডারের দ্বারা স্থাপিত ব্যাংক নয়। সোনালী ব্যাংকের যেমন ব্যাংক অর্ডার আছে, বেসিকের তেমন নেই। একটি আইন দ্বারা সোনালী, রূপালী ও অগ্রণী ব্যাংক প্রতিষ্ঠিত। বেসিক ব্যাংক কোনো আইন দিয়ে প্রতিষ্ঠিত নয়। সরকার যেমন বেশ কিছু প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ধারণ করে, তেমনি বেসিকেরও শেয়ার ধারণ করে। বেসিক স্পেশালাইজড একটি ব্যাংক ছিল। যেটি একটা বিশেষ উদ্দেশ্যে গঠন করা হয়েছিল। এটি ব্যাংক হিসেবে সরকারের আইন দ্বারা প্রতিষ্ঠিত নয়। 


খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সরকারে গেজেট, বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিপত্রের মাধ্যমে বেসিক ব্যাংককে শতভাগ রাষ্ট্র মালিকানাধীন বাণিজ্যিক ব্যাংক। উচ্চ আদালতের রায়ে বেসিক ব্যাংকের কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের সরকারি কর্মচারী উল্লেখ করা হয়েছে। দেশে কার্যরত রাষ্ট্র মালিকানাধীন অন্যান্য ব্যাংক যে বিধিমালা ও নীতিমালার আওতায় পরিচালিত হচ্ছে বেসিক ব্যাংকও একই বিধিমালা ও নীতিমালার অধীনে পরিচালিত। 


রাষ্ট্র মালিকানাধীন বাণিজ্যিক ব্যাংক হিসেবে সোনালী, জনতা, অগ্রণী, রুপালী, বিডিবিএল যে সাংগঠনিক কাঠামোর আওতায় (অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ কর্তৃক অনুমোদিত) পরিচালিত হচ্ছে, বেসিক ব্যাংকও একই সাংগঠনিক কাঠামোর আওতায় পরিচালিত হচ্ছে। এ ছাড়া অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের বার্ষিক প্রতিবেদনে রাষ্ট্র মালিকানাধীন ৬টি বাণিজ্যিক ব্যাংকের তালিকায় বেসিক ব্যাংক রয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের ওয়েবসাইটে রাষ্ট্র মালিকানাধীন বাণিজ্যিক ব্যাংকের তালিকাতেও বেসিক ব্যাংক রয়েছে। 


এসব যুক্তিতে বেসরকারি ব্যাংকের সঙ্গে একীভূত হতে চাচ্ছেন না বেসিক ব্যাংকের কর্মকর্তা–কর্মচারীরা। তাই সরকারি ব্যাংকের সঙ্গে একীভূত হওয়ার দাবিতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নরকে স্মারকলিপি দিয়েছেন তাঁরা। একই দাবিতে অর্থ মন্ত্রণালয়েও স্মারকলিপি দেওয়া হয়েছে।

সূত্র:আজকের পত্রিকা।

Post a Comment

0 Comments