ব্যাংক একীভুতকরণ, দুশ্চিন্তায় গ্রাহক শঙ্কায় কর্মীরা!




 পদ্মা ব্যাংকের ঢাকার একটি শাখার গ্রাহক নাদিয়া আরফিন। দুর্বল ব্যাংকটি এক্সিম ব্যাংকের সঙ্গে একীভূত হওয়ার খবর পাওয়ার পরই তিনি নিজের অ্যাকাউন্টে জমা থাকা ১৩ লাখ টাকা তুলে ফেলেন। এরপর লোকজনের কাছে খোঁজ নিয়ে তুলনামূলক ভালো দুটি বেসরকারি ব্যাংকে সেই টাকা জমা করেছেন।


একের পর এক ব্যাংক একীভূত হওয়ার খবরে আমানত নিয়ে এমনই দুশ্চিন্তায় আছেন ওই সব ব্যাংকের অনেক গ্রাহক। একইভাবে ব্যাংকগুলোর কর্মীরাও আছেন উদ্বেগ-উৎকণ্ঠায়, চাকরি থাকবে তো? থাকলে কোথায় পদায়ন করা হবে, সেটাও আরেক চিন্তা।


যদিও বাংলাদেশ ব্যাংক দুই দিন আগে ব্যাংক একীভূতকরণের যে নীতিমালা জারি করেছে, সেখানে ওপরের দু-একটি পদ বাদে ব্যাংকের সাধারণ কর্মীদের তিন বছরের মধ্যে ছাঁটাই না করার কথা বলা হয়েছে।


এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক মেজবাউল হক বলেন, ‘ব্যাংক একীভূত করার সময় যাতে কর্মচারীদের গণহারে ছাঁটাই করা না হয়, সে জন্যই বাংলাদেশ ব্যাংক রোডম্যাপে সুরক্ষা ব্যবস্থা রেখেছে। এর পরও কারও অন্যায় পেলে তো ব্যবস্থা নেবে।’


গত মাসে বেসরকারি এক্সিম ব্যাংকের সঙ্গে একীভূত হয়েছে পদ্মা ব্যাংক। আর আগামীকাল সোমবার সোনালী ব্যাংকের সঙ্গে বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক (বিডিবিএল) এবং বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকের সঙ্গে রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংকের (রাকাব) একীভূতকরণের চুক্তি হতে পারে বলে জানা গেছে। এরপরই শোনা যাচ্ছে অগ্রণী ব্যাংকের সঙ্গে একীভূত হতে পারে বেসিক ব্যাংক। ন্যাশনাল ব্যাংক, বাংলাদেশ কমার্স ব্যাংক, আইসিবি ইসলামী ব্যাংক, এবি ব্যাংক, ন্যাশনাল ব্যাংক অব পাকিস্তানসহ আরও প্রায় এক ডজন ব্যাংক একীভূত হতে পারে বলে বিভিন্ন সূত্রে খবর আছে।


ভালো-মন্দের ওপর ভিত্তি করে সম্প্রতি লাল-হলুদ-সবুজ ব্যাংকের একটি


তালিকা ছড়িয়ে পড়ে। এর পর থেকেই উদ্বেগ-দুশ্চিন্তা ভর করে ওই সব ব্যাংকের গ্রাহক ও কর্মীদের মধ্যে।


পদ্মা ব্যাংকের মতিঝিল শাখার গ্রাহক ফাতিমা তুজ জোহরা বলেন, ‘এক্সিম ব্যাংকের সঙ্গে একীভূত হওয়ার পরে গ্রাহক হিসেবে উদ্বিগ্ন হয়ে ৫ লাখ টাকা তুলে ফেলছি। এটা আর কোনো বেসরকারি ব্যাংকে রাখব না।’


পদ্মা ব্যাংকের একজন কর্মকর্তা জানান, একীভূত কার্যক্রম শুরু হওয়ার পর আতঙ্ক বেড়েছে আমানতকারীদের। সে জন্য পদ্মা ব্যাংকে টাকা অস্বাভাবিকভাবে তুলছেন গ্রাহকেরা।


গ্রাহকেরা যখন তাঁর আমানত নিয়ে দুশ্চিন্তায়, তখন ব্যাংককর্মীরা উদ্বেগে আছেন তাঁদের চাকরি নিয়ে। একীভূত হওয়ার পর দুর্বল ব্যাংকটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক, উপব্যবস্থাপনা পরিচালকের চাকরি যে থাকবে না, একীভূতকরণের নীতিমালাতেই উল্লেখ করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। তবে এর বাইরে অন্য কর্মীদের তিন বছরের মধ্যে ছাঁটাই না করার নিশ্চয়তাও দেওয়া হয়েছে। কিন্তু এরপরও কর্মীদের উদ্বেগ কাটছে না। তাঁদের আশঙ্কা, এই মুহূর্তে চাকরি না গেলেও তুলনামূলক ঝুঁকিপূর্ণ পদে পদায়ন এবং ঋণ আদায় ও আমানত সংগ্রহের লক্ষ্য বেঁধে দিয়ে চাপে ফেলা হতে পারে।


বিডিবিএল ব্যাংকের একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, ‘সরকারি ব্যাংকও একীভূত হতে পারে, তা চিন্তার বাইরে ছিল। সোনালী ব্যাংকের তো কাজ করাই কঠিন হয়ে পড়বে। আবার কোথায় পদায়ন করে—এই নিয়েও ভয় কাজ করছে।’


তবে সোনালী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এবং সিইও মো. আফজাল করিম আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘দক্ষতা এবং ব্যক্তিগত যোগ্যতা দেখেই পদায়ন করা হবে। কারও সমস্যা হবে না। সবাই যোগ্যতা দিয়ে টিকে থাকবে।’


পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুর আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘বাংলাদেশ ব্যাংক আমানতকারীদের সুরক্ষা দিতে পারলেও কর্মী ছাঁটাইয়ের শঙ্কা থাকবে। কারণ, একই এলাকায় দুই ব্যাংকের দুটি শাখা থাকলে, সেখানে একটি শাখা কমানো হবে। তখন ওই শাখার কর্মীরা কোথায় যাবেন? শুধু শাখা পর্যায়ে নয়, ব্যাংকের ওপর থেকে নিচ পর্যন্ত প্রতিটি ক্ষেত্রেই কর্মকর্তা-কর্মচারী চাকরি হারাতে পারেন।’


এ বিষয়ে জানতে চাইলে এক্সিম ব্যাংকের চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম মজুমদার বলেন, ‘নানান দিক আলোচনা করেই ব্যাংকের একীভূতকরণ চুক্তি করেছি। এতে কারও কোনো সমস্যা নেই।’

Post a Comment

0 Comments