ব্যাংক আমানতে আবগারি শুল্ক বাড়াতে চায় এন বি আর।


 



দেশে গত দুই বছরে ডলারের দাম বৃদ্ধি পেয়েছে। ফলে এলসি খোলা কমে গেছে। এর প্রভাব পড়েছে দ্রব্যমূল্যের বাজারে। দ্রব্যমূল্যের বাজার যখন লাগাম ছাড়া তখনও ব্যাংকে কোটিপতি আমানকারীর সংখ্যা বেড়েই চলেছে। আবার অভ্যন্তরীণ বা আর্ন্তজাতিক-দুই ক্ষেত্রেই বিমান- যাত্রী বেড়েছে। এবার কোটিপতি আমানতাকারী আর বিমানযাত্রীদের থেকে বেশি আবগারি শুল্ক বাড়াতে চায় জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। এনবিআর বলছে, গত দুই বছর আবগারি শুল্ক বাড়ানো হয়নি। ব্যাংক খাতে গত দুই বছরে আমানতকারীর সংখ্যা বেড়েছে। তবে সাধারণ আমানকারী নয়, কোটিপতি আমানকারীদের ওপর বাড়তি শুল্ক বসানোর প্রস্তাব করা হয়েছে।


কারণ হিসেবে বলা হয়েছে, গত দুই বছর ডলারের দাম বেড়েছে, ফলে কমেছে এলসি খোলা। এতে ব্যাংকিং খাতে আশানুরূপ প্রবৃদ্ধি হয়নি। সেজন্য আবগারি শুল্কের পরিধি বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে। বর্তমানে ছয় ধরনের আমানতের ওপর আবগারি শুল্ক রয়েছে। সেটা বাড়িয়ে আট ধরনের আমানতের ওপর আবগারি শুল্ক বাড়াতে বলা হয়েছে। অর্থাৎ এক কোটি থেকে ৫০ কোটি টাকার বেশি আমানকারীর ওপর বাড়তি আবগারি শুল্ক বসানোর প্রস্তাব করা হয়েছে। এতে বছরে প্রায় ৩১৩ কোটি টাকা বাড়তি আবগারি শুল্ক আদায় হবে। এনবিআরের আওতাধীন বৃহৎ করদাতা ইউনিট (এলটিইউ), মূল্য সংযোজন কর-এই প্রস্তাব করেছে।


সূত্রমতে, এনবিআরের ২০২২ সালের আদেশ (এসআরও-১৬২) অনুযায়ী, বর্তমানে ব্যাংক আমানতের পরিমাণের ওপর ছয় ধরনের আবগারি শুল্ক কাটা হচ্ছে। এর মধ্যে বছরে অন্তত একবার কোনো গ্রাহকের সঞ্চয়ী ব্যাংক হিসাবে এক টাকা থেকে এক লাখ টাকা জমা হলে কোনো আবগারি শুল্ক কাটা হয় না। এক লাখ এক টাকা থেকে পাঁচ


সর্বশেষ ২০২২ সালে আবগারি শুল্ক বাড়ানো হয়েছে, ব্যাংকিং খাতে প্রবৃদ্ধির জন্য আবগারি শুল্ক বাড়াতে হবে


এক কোটি থেকে ৫০ কোটি টাকার আমানতে আবগারি শুল্ক বাড়ালে বাড়তি আদায় হবে ৩১৩ কোটি টাকা


গত দুই বছরে ডলারের দাম ব্যাপক হারে বৃদ্ধি পাওয়ায় ব্যাংকিং খাতের রাজস্ব প্রবৃদ্ধি আশানুরূপ হচ্ছে না


লাখ টাকা পর্যন্ত অর্থ জমা হলে তার জন্য ১৫০ টাকা আবগারি শুল্ক কাটা হচ্ছে। পাঁচ লাখ এক টাকা থেকে ১০ লাখ টাকা জমার ক্ষেত্রে কাটা হচ্ছে ৫০০ টাকা, ১০ লাখ এক টাকা থেকে এক কোটি টাকা পর্যন্ত তিন হাজার টাকা, এক কোটি এক টাকা থেকে পাঁচ কোটি টাকা পর্যন্ত ১৫ হাজার টাকা কাটা হচ্ছে। আর পাঁচ কোটি টাকার বেশি অর্থ জমা হলে সে ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ ৫০ হাজার টাকা আবগারি শুল্ক কাটা হচ্ছে। এনবিআর সূত্রমতে, এলটিইউ সম্প্রতি


এনবিআরকে বাজেট প্রস্তাবনা দেয়া হয়েছে। এতে ব্যাংক আমানতের ওপর আবগারি শুল্কহার বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে। বর্তমানে ছয় ধরনের আমানতের ওপর আবগারি শুল্ক রয়েছে। এলটিইউ থেকে আট ধরনের আমানতের ওপর আবগারি শুল্ক বাড়াতে প্রস্তাব করা হয়েছে। তবে মধ্যবিত্ত বা সাধারণ গ্রাহকের আমানতের ওপর নয়; বরং ধনীদের আমানতের ওপর আবগারি শুল্ক বাড়াতে বলা হয়েছে। অর্থাৎ এক কোটি থেকে ১০ কোটি টাকার বেশি ব্যাংক আমানতের ওপর আবগারি শুল্ক বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে।


প্রস্তাবে বলা হয়েছে, বছরে অন্তত একবার কোনো


গ্রাহকের সঞ্চয়ী ব্যাংক হিসাবে এক টাকা থেকে এক লাখ টাকা জমা হলে কোনো আবগারি শুল্ক কাটা হবে না। এক লাখ এক টাকা থেকে পাঁচ লাখ টাকা পর্যন্ত অর্থ জমা হলে তার জন্য ১৫০ টাকা আবগারি শুল্ক কাটা হবে। পাঁচ লাখ এক টাকা থেকে ১০ লাখ টাকা জমার ক্ষেত্রে কাটা হবে ৫০০ টাকা, ১০ লাখ এক টাকা থেকে ৫০ লাখ টাকা পর্যন্ত তিন হাজার টাকা, ৫০ লাখ এক টাকা থেকে এক কোটি টাকা পর্যন্ত পাঁচ হাজার টাকা কাটা হবে। আর এক কোটি এক লাখ টাকা থেকে পাঁচ কোটি টাকা পর্যন্ত ১৮ হাজার টাকা, পাঁচ কোটি এক টাকা থেকে ১০ কোটি টাকা পর্যন্ত ৫০ হাজার টাকা আবগারি শুল্ক কাটা হবে। আর ১০ কোটি টাকার বেশি অর্থ জমা হলে সে ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ ৭০ হাজার টাকা আবগারি শুল্ক কাটা হবে।


আবগারি শুল্ক বাড়ানোর পক্ষে যুক্তি দেখিয়েছে এলটিইউ। বলা হয়েছে, গত দুই বছরে ব্যাংক একচেঞ্জ রেট বা ডলারের দাম ব্যাপক হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। ফলে এলসি খোলার হার কমে যাচ্ছে। ফলে ব্যাংকিং খাতের রাজস্ব প্রবৃদ্ধি আশানুরূপ

হচ্ছে না। ব্যাংকিং খাতের প্রবৃদ্ধি বৃদ্ধির জন্য আবগারি শুল্কহার বৃদ্ধি করা প্রয়োজন। উল্লেখ্য, ২০২২, ২০২০, ২০১৭, ২০১৫ ও ২০১০ সালে ব্যাংক ডিপোজিট ও বিমান টিকিটে আবগারি শুল্কহার পরিবর্তন বা সংশোধন করা হয়েছিল। সেই ধারাবাহিকতায় আগামী ২০২৪-২৫ অর্থবছর আবগারি শুল্কহার সংশোধন করা যায়।


বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাব অনুযায়ী, ২০২৩ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত এক কোটি এক টাকা থেকে পাঁচ কোটি টাকার আমানতকারীর হিসাব সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৯২ হাজার ৫১৬টিতে; যেখানে জমা ছিল এক লাখ ৯৪ হাজার ৩৩৬ কোটি টাকা। পাঁচ কোটি ১ টাকা থেকে ১০ কোটির ১২ হাজার ৬৫২টি হিসাবে জমার পরিমাণ ৮৯ হাজার ৪৫১ কোটি টাকা। এছাড়া ১০ কোটি থেকে ১৫ কোটি টাকার হিসাবের সংখ্যা রয়েছে চার হাজার ৮২টি, ১৫ কোটি থেকে ২০ কোটির মধ্যে ২ হাজার ২টি, ২০ কোটি থেকে ২৫ কোটির মধ্যে এক হাজার ৩৪৫টি, ২৫ কোটি থেকে ৩০ কোটির মধ্যে রয়েছে ৯১২টি আমানতকারীর হিসাব। আর ৩০ কোটি থেকে ৩৫ কোটি টাকার মধ্যে ৫১২টি এবং ৩৫ কোটি থেকে ৪০ কোটির মধ্যে রয়েছে ৪৮০টি, ৪০ কোটি থেকে ৫০ কোটি টাকার হিসাব সংখ্যা ৭৩৮টি। তাছাড়া ৫০ কোটি টাকার বেশি আমানত রাখা হিসাবের সংখ্যা এক হাজার ৮১২টি।


হিসাব অনুযায়ী, এক কোটি থেকে ৫০ কোটি টাকার মোট আমানতকারীর সংখ্যা এক লাখ ১৭ হাজার ৫১টি। এসব আমানতের ওপর আবগারি শুল্ক বাড়ানো হলে বাড়তি প্রায় ৩১২ কোটি ৯৭ টাকা আদায় হবে। আমানতের মধ্যে এক কোটি থেকে পাঁচ কোটির মধ্যে আমানতকারীর সংখ্যা


রয়েছে ৯২ হাজার ৫১৬টি। এক কোটি থেকে পাঁচ কোটি টাকার আমানতের ওপর ১৮ হাজার টাকা আবগারি শুল্ক বসানোর প্রস্তাব করা হয়েছে। সে হিসাবে এসব আমানত থেকে আবগারি শুল্ক আদায় হবে প্রায় ১৬৬ কোটি ৫৩ লাখ টাকা। পাঁচ কোটি থেকে ১০ কোটি টাকার আমানতকারীর সংখ্যা রয়েছে ১২ হাজার ৬৫২টি। পাঁচ কোটি থেকে ১০ কোটি টাকার আমানতের ওপর ৫০ হাজার টাকা করে আবগারি শুল্ক বসানোর প্রস্তাব করা হয়েছে। সে হিসাবে এসব আমানত থেকে আবগারি শুল্ক আদায় হবে প্রায় ৬৩ কোটি ২৬ লাখ টাকা। আর ১০ কোটি টাকা থেকে ৫০ কোটি টাকার বেশি আমানতকারী রয়েছে ১১ হাজার ৮৮৩টি। ১০ কোটি টাকার ওপরে আমানতে ৭০ হাজার টাকা করে আবগারি শুল্ক বসানোর প্রস্তাব করা হয়েছে। এতে আবগারি শুল্ক আদায় হবে প্রায় ৮৩ কোটি ১৮ লাখ টাকা। সূত্র মতে, প্রতি বছর ডিসেম্বর মাসে সঞ্চয়ী হিসাব (যেমন বেতন-ভাতার টাকা কিংবা সারা বছর যেসব হিসাবে লেনদেন হয়) থেকে আবগারি শুল্ক কাটে ব্যাংকগুলো। কারণ ব্যাংকের হিসাব-নিকাশের সময় জানুয়ারি থেকে ডিসেম্বর মাস। অন্যদিকে স্থায়ী আমানতের হিসাবের ক্ষেত্রে যখন এফডিআর মেয়াদপূর্তি হয়, তখন সঙ্গে সঙ্গে আবগারি শুল্কের টাকা কেটে রাখা হয়। আর বিমানের টিকিট কেনার সময় আবগারি শুল্ক কেটে রাখা হয়। উল্লেখ্য, সর্বশেষ ২০২০-২১ অর্থবছরে প্রায় আড়াই হাজার কোটি টাকার আবগারি শুল্ক আদায় হয়েছে। এ বিষয়ে এনবিআরের একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না


করার শর্তে শেয়ার বিজকে বলেন, দুই বছর আগে আবগারি শুল্কহার পরিবর্তন করা হয়েছে। এলটিইউ যে প্রস্তাব দিয়েছে, তা যৌক্তিক। তবে আলোচনা সাপেক্ষে এ হার বাড়ানো হতে পারে।

তথ্যসূত্রঃ দৈনিক শেয়ার বিজ ৯/৪/২৪।

Post a Comment

0 Comments